ফের আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল

Passenger Voice    |    ১০:৪৮ এএম, ২০২৪-০৪-১৮


ফের আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল

বন্দরে আমদানি-রপ্তানি সহজ করে একটি মানসম্মত আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল। বাড়ায় বন্দরের সক্ষমতা। চট্টগ্রামের লালদিয়া চরে এমন একটি কনটেইনার টার্মিনাল গড়ে তুলতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিদেশি একটি কোম্পানি। তারা বিনিয়োগ করতে চায় প্রায় ৫শ কোটি টাকা। এতে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর নতুন করে আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি।

প্রায় ১১ বছর ঝুলে থাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রকল্প (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ- পিপিপি) থেকে বাদ দিয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) ব্যাকআপ ইয়ার্ড করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়। শেষমেশ ডেনমার্কভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং কোম্পানি মার্স্ক লাইন এ টার্মিনাল নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও আইকনিক প্রকল্প বে-টার্মিনাল। এ প্রকল্প হাতে নেওয়ার অনেক আগে থেকেই লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ১১ মার্চ লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রথমদিকে শুধু বাল্ক টার্মিনাল করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল করার পরিকল্পনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক পর্যায়ে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালে পাঁচটি জেটি এবং এক হাজার মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ মিটার প্রস্থের ব্যাকআপ ইয়ার্ড নির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজতর করে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।

দেশের প্রথম পিপিপির ভিত্তিতে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তখন আগ্রহী পাঁচ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ছিল ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট মাল্টি পোর্ট অপারেটর আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড, দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড, ফ্রান্সের বোলোর, বেইজিংভিত্তিক চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক গ্লোবাল পোর্ট সার্ভিসেস।

প্রাথমিক পর্যায় থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছিল, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনালের প্রস্তাবিত জায়গায় ১৭শ পরিবার বসবাস করে। উচ্ছেদ ও ভূমি জটিলতার কারণে প্রকল্পটি এগোনো যাচ্ছে না। পিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকেও সরে আসে সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের মার্চের শুরুতে ১৭শ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে লালদিয়া চরের পুরো জায়গা নিজেদের আয়ত্তে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মেয়মাণ পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের পরে কর্ণফুলী নদীর ১২ নম্বর ঘাটের পর থেকে ইনকনট্রেড ডিপো পর্যন্ত পুরো এলাকায় উঁচু সীমানা নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কর্ণফুলীর মোহনার কাছাকাছি জায়গাটিতে টার্মিনাল নির্মিত হলে বন্দর অপারেশনে গতি বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-ব্যবস্থাপক (ভূমি) মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, ‘লালদিয়া চরের জায়গাগুলো আমাদের (বন্দর) নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে চারদিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে জায়গা বেদখল না হয়। যার একটি অংশে লালদিয়া টার্মিনালের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

সবশেষ পিপিপি থেকে বাদ দেওয়ার শেষ পর্যায়ে আবারও আশা জাগতে শুরু করে। ডেনমার্কভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি মার্স্ক লাইন লালদিয়া চর মাল্টিপারপাস টার্মিনালে ৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেয়। মার্স্ক লাইন বিশ্বের ১১৬টি দেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রায় ৮শর কাছাকাছি জাহাজ পরিচালনা করে মার্স্ক লাইন। বাংলাদেশ ও ডেনমার্ক সরকারের মধ্যে জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তির আওতায় পিপিপি মডেলে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করার বিষয়ে আগ্রহ দেখায় মার্স্ক লাইন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্স্ক লাইন প্রথমে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) অপারেশনের বিষয়ে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু পিসিটি অপারেশনের জন্য সৌদি রাজ পরিবারের মালিকানাধীন রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকে দেওয়ার পর লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায় মার্স্ক লাইন।

মার্স্ক লাইনের প্রস্তাব অনুসারে, প্রকল্পে তারা ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫শ কোটি টাকার মতো। টার্মিনাল নির্মাণ ও প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন করে তারা অপারেশনে যাবে। ৪০ বছর তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় টার্মিনালটির অপারেশন চালাবে। পরে টার্মিনালটি চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হস্তান্তর করবে তারা। এরই মধ্যে মার্স্ক লাইন তাদের নিজস্ব অর্থে প্রকল্পের সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।

পিপিপি অথরিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৪৫০ মিটার, বার্থ গভীরতা সাড়ে ১০ মিটার এবং জাহাজের ড্রাফট হবে সাড়ে ৯ মিটার।

এ বিষয়ে কথা হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘লালদিয়া চরে মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের বিষয়ে মার্স্ক লাইন আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই মধ্যে তারা একটি প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে ৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে তারা। তাদের প্রস্তাব যাচাই করা হচ্ছে। এখনো কোনো ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু প্রকল্পটি পিপিপিতে হবে সেহেতু মন্ত্রণালয় ও পিপিপি অথরিটি পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।’ সূত্র: জাগো নিউজ